তাক্বদীর সম্পর্কিত কতিপয় গুরুত্বপূর্ণ মাসআলাঃ সাত. তাক্বদীরের প্রতিটি সিদ্ধান্তে সন্তুষ্ট থাকা কি যরূরী?

সাত. তাক্বদীরের প্রতিটি সিদ্ধান্তে সন্তুষ্ট থাকা কি যরূরী?: ওলামায়ে কেরাম এ প্রশ্নের জবাব দিতে গিয়ে বলেছেন, অনাকাংখিত যে কোন বিপদাপদ, বালা-মুছীবতে ধৈর্য্যধারণ করা অপরিহার্য। ফলে বিপদাপদ এবং দুঃখ-কষ্টে ধৈর্য্যহারা হওয়া যাবে না, অস্থিরতা প্রকাশ করা যাবে না। অধৈর্য্য হয়ে ক্রোধান্বিত হওয়া, বুক চাপড়ানো, চুল ছেড়া ইত্যাদি কর্মকাণ্ড নেহায়েত অন্যায়। মনে রাখতে হবে, আল্লাহ্‌র সিদ্ধান্তে বিচলিত হওয়া, আপত্তি পেশ করা মুমিনের বৈশিষ্ট্য নয়। কিন্তু প্রশ্ন হল, বিপদাপদে ধৈর্য্যধারণের সাথে সাথে সন্তুষ্ট হওয়াও কি অপরিহার্য? এর সঠিক জবাব হচ্ছে, সন্তুষ্ট হওয়া অপরিহার্য নয়; বরং উত্তম। কারণ শরী‘আতে বিপদাপদে সন্তুষ্ট থাকা অপরিহার্য মর্মে কোন নির্দেশ আসেনি। তাছাড়া বেশীর ভাগ মানুষের ক্ষেত্রে সেটি অসম্ভবও বটে।

তবে দোষ-ত্রুটি, অন্যায়-অপকর্ম ইত্যাদিতে সন্তুষ্ট হওয়া উচিৎ নয়; বরং সেগুলিকে ঘৃণা করে পরিত্যাগ করতে হবে।[1]

শায়খ উছায়মীন (রহেমাহুল্লাহ) আরো স্পষ্ট এবং সুন্দরভাবে বিষয়টি তুলে ধরেছেন। তিনি বলেন, অনাকাঙ্খিত বালা-মুছীবতের ক্ষেত্রে বান্দার নিম্নোক্ত চার ধরনের অবস্থান হয়ে থাকেঃ

এক. অসন্তোষ প্রকাশ: এই প্রকারের অবস্থান হারাম; বরং তা কবীরাহ গোনাহের অন্তর্ভুক্ত। গালে আঘাত করা, চুল উপড়ানো, জামা ছেড়া, নিজের ধ্বংস কামনা করা ইত্যাদি বালা-মুছীবতে অসন্তোষ প্রকাশের অন্যতম নিদর্শন।

দুই. ধৈর্য্যধারণ: আর ধৈর্য্যধারণের অর্থ হচ্ছে নিজের মন, মুখ এবং অঙ্গ-প্রত্যঙ্গকে অসন্তোষ প্রকাশের নিদর্শনসমূহ থেকে নিয়ন্ত্রণ করা। বালা-মুছীবতের ক্ষেত্রে এই প্রকারের অবস্থান অপরিহার্য।

তিন. সন্তুষ্ট হওয়া: ধৈর্য্যধারণ করা এবং সন্তুষ্ট হওয়ার মধ্যে পার্থক্য রয়েছে। ধৈর্য্যধারণকারী বালা-মুছীবতকে হযম করে নেয় ঠিকই, কিন্তু তার মনের ভেতরে সেটি কঠিন এবং কষ্টদায়ক হিসাবেই গণ্য হয়। পক্ষান্তরে সন্তুষ্ট প্রকাশকারী সেটিকে কষ্টদায়কই মনে করে না; বরং সে মানসিকভাবে খুশী এবং প্রশান্ত হয়। সে মনে করে, তার কিছুই হয়নি। ইবনে তায়মিইয়াহ (রহেমাহুল্লাহ)সহ বেশীরভাগ বিদ্বানের নিকট বালা-মুছীবতে সন্তুষ্ট হওয়া যরূরী নয়; বরং উত্তম।

চার. শুকরিয়া আদায় করা: অর্থাৎ ‘আলহামদুলিল্লাহ’ পাঠ করা এবং বিপদটিকে নে‘মত মনে করা। কেউ বলতে পারে, কিন্তু এটি কিভাবে সম্ভব? আমরা বলব, আল্লাহ কাউকে তাওফীক্ব দিলে সেটি অসম্ভব কিছু নয়। কারণ:

প্রথমত: যখন সে জানবে যে, এই বিপদ তার পাপের কাফফারাহ স্বরূপ এবং পরকাল পর্যন্ত পাপের শাস্তিকে বিলম্বিত করার চেয়ে ইহকালে শাস্তি হয়ে যাওয়া উত্তম, তখন তার জন্য এই বিপদ নে‘মতে পরিণত হবে এবং এর কারণে সে আল্লাহ্‌র শুকরিয়া আদায় করবে।

দ্বিতীয়ত: মুছীবতে ধৈর্য্যধারণ করলে বান্দাকে উত্তম প্রতিদান দেওয়া হয়। এরশাদ হচ্ছে,

﴿إِنَّمَا يُوَفَّى الصَّابِرُونَ أَجْرَهُم بِغَيْرِ حِسَابٍ﴾ [سورة الزمر: 10]

‘ধৈর্য্যধারণকারীদেরকে অগণিত পুরষ্কার প্রদান করা হয়’ (যুমার ১০)। সুতরাং এই কথা স্মরণ করে সে আল্লাহ্‌র শুকরিয়া আদায় করবে।[2]

[1]. মাজমূ‘উ ফাতাওয়া, ৮/১৯১; শিফাউল আলীল/৫৪৫-৫৪৬; ড. ফারূক্ব আহমাদ, আল-ক্বাযা ওয়াল ক্বাদার ফিল-ইসলাম, (বৈরূত: আল-মাকতাবুল ইসলামী, দ্বিতীয় প্রকাশ: ১৯৮৬ ইং), ১/১৭৯।

[2]. শারহুল আক্বীদাতিল ওয়াসেত্বিইয়াহ, ১/৩৪৯-৩৫০।